সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ বিগত বছরের লোকসানের মুখোমুখি হলেও মাঘের শুরু থেকে তরমুজ চাষ শুরু করেন চাষিরা। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ না থাকায় তরমুজের চারা ভালো হয়েছিল।
ভালো চারা ও ভালো আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে তরমুজ। স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের। যেখানে চোখ যাবে, সেখানেই তরমুজ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধুই তরমুজ। ভরা মৌসুম চলে পরিচর্যা, কাটা, পরিবহন ও বাজারজাত করা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা।
এ কারণে ক্ষেত, পথ-ঘাট, ট্রলার যত্রযত্র তরমুজের দেখা মেলে। যথাসময়ে ভোক্তার হাতে তুলে দিতেই চলছে তরমুজ নিয়ে এ ছুটোছুটি। তরমুজ ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে পরিপক্ক তরমুজ যেগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন পিরোজপুর জেলার কৃষকরা।
গত বছরের জমিতে বৃষ্টির পানি থাকার কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর তারা ঘুরে দাঁরাতে পারবেন এমন আশা করছেন তরমুজ চাষীরা। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পিরোজপুরসহ দক্ষিনাঞ্চলের জনপদের বরিশালে হতে পারে দেশের সর্ববৃহৎ তরমুজের বাজার।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ আবাদে সফলতা পাচ্ছেন পিরোজপুর জেলার কৃষকরা। তাদের সঙ্গে পাইকার খুচরা ব্যাবসায়ীরাও তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর গত বছরের তুলনায় কম জমিতে তরমুজ চাষ হলেও, ভালো ফলনে আশায় বুক বেধেছিলেন সদর উপজেলার চালিতাখালী গ্রামে চাষীরা। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারনে মাঠে তরমুজ কিনতে ক্রেতারা কম আসার আশংকা করছেন স্থানীয় চাষীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সবুজ রঙের মধ্যে দোল খাচ্ছে তরমুজের পাতা। আবহাওয়া ভালো থাকায় তরমুজের ফলের রঙ বদলে গেছে। পেয়েছে নতুন যৌবন। সর্বত্রই তরমুজের ছড়াছড়ি।
পিরোজপুর সদর উপজেলার চালিতাখালী গ্রামের তরমুজ চাষী গিয়াস খান, কালাম সিকদার, আজিজুল ইসলাম তারা ঢেকিকল দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পা দিয়ে চেপে পানি তুলে সেচ দেন তরমুজ গাছে। পরিবারের সদস্যরা শরীক হয় এ কাজে।
চাষী গিয়াশ খান জানান, বর্তমানে তার ৬ বিঘা তরমুজ ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে পরিপক্ক তরমুজ যেগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন। এ সময় মুখে আনন্দের হাসি থাকার কথা থাকলেও, তরমুজ বিক্রি নিয়ে সংশয় থাকায় কালাম সিকদারের চেহারায় হাসির পরিবর্তে রয়েছে বিষন্নতার ছাপ। একই রকম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে ওই গ্রামের অন্যান্য তরমুজ চাষীরাও।
করোনা ভাইরাসের কারণে দূর দূরান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা পিরোজপুরে আসতে পারছেন না। এছাড়া সকল সাপ্তাহিক ও দৈনিক হাটগুলোয় স্থানীয় পাইকারী ক্রেতারাও খুব একটা ভিড়ছেন না তরমুজ ক্ষেতে। আর এতেই বেড়েছে চাষীদের দুশ্চিন্তা। এছাড়া চালিতাখালী গ্রামের মধ্য দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির অবস্থাও খুবই খারাপ। এতেও বেড়েছে চাষীদের ভোগান্তি।
বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষীরা সেই টাকা ব্যয় করেছেন তরমুজ চাষের জন্য। তবে এ বছর তরমুজ বিক্রি করতে না পারলে পথে বসতে হবে এসব চাষীদের। অন্যদিকে মাঠে তরমুজ থাকাকালীন সময়ে বৃষ্টি কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে দুর্ভোগের কোন সীমা থাকবে না এসব চাষীদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর সদর উপজেলার চালিতাখালী গ্রামে এ বছর ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। তবে গত বছর এই গ্রামে ১০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হলেও, ফলন খারাপ হওয়ায় এ বছর আবাদী জমির পরিমান কমেছে।
Leave a Reply